Headlines
Loading...
এ কে এম আব্দুল্লাহ’র গল্প: একটি আনকাট ফুটেজ

এ কে এম আব্দুল্লাহ’র গল্প: একটি আনকাট ফুটেজ

 



গল্প:একটি আনকাট ফুটেজ 

                                এ কে এম আব্দুল্লাহ

 

মাত্র মাস ছয়েক হলো আমার চাকুরি হয়েছে। ইতোমধ্যে মায়ের চাপে প্রায় শ’খানেক মেয়ে দেখা হয়েছে।আমাকে এ মাসের মধ্যে বিয়ে করতেই হবে।মায়ের শরীর দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। রান্নার কাজ আর করতে পারছেন না। অন্যদিকে কোনও কাজের লোকের হাতের রান্না খাবেনও না। এক কথা বউ চাই।নাতি-নাতনির মুখ দেখে শান্তিতে মরতে চাই।

সেই কলেজ জীবন থেকে, বাবা যখন জীবিত ছিলেন, তখন থেকে রান্না-বান্নার বাহানায় বিয়ে করাতে চেয়েছিলেন।প্রথমে লেখা পড়া শেষ করা এবং পরে নিজের পায়ে দাঁড়াবার বাহানায় এতদিন বিয়ে করিনি।এখন আর কোনো বাহানা চলবে না,মা আদেশ জারি করেছেন।বাড়িতে কেবল মা আর আমি এই দু’প্রাণির বাস।পার্ট টাইম একটি কাজের মেয়ে আছে। সকাল আর সন্ধ্যায় এসে কাজ করে চলে যায়।আজ অফিস থেকে যেন স্ট্রেইটওয়ে ঘরে আসি, মা বলে দিলেন।সন্ধ্যায় একটি মেয়ে দেখতে যাব।

                                                                             

সন্ধ্যার একটু পরেই আমি আর মা কনে দেখতে যাত্রা করি।ঘন্টাখানেকের পথ।পৌঁছতে প্রায় আটটা বেজে গেল।মেয়েটির নাম মিলি। মিলিদের বাড়ি দেখতে অনেক পরিপাটি।বুঝাই যাচ্ছে আমাদের যাওয়া উপলক্ষ্যে বাড়িতে বেশ আয়োজনও করা হয়েছে।একসময় মিলিকে নিয়ে আসা হলো। অল্প কথা বলেই উভয় ফ্যামিলিরই পছন্দ হয়ে গেলো।

নাশতার ফাঁকে আমাকে আর মিলিকে একান্তে কিছু কথা বলার সুযোগও দেয়া হলো। নীল রঙের শাড়িতে ওকে অপরুপ লাগছিল।অত্যন্ত ইনোসেন্ট ফেইস মনে হল।আমাদের বায়োডাটা পুর্বেই দেয়া ছিল।আজ শুধু ফিজিক্যালি দেখা। তাই আমাদের মধ্যে শুধু টুকটাক কথা হল।

মা এবং লিলির ফ্যামিলির মধ্যে কথাবার্তা শেষে বিয়ের জন্য দিন তারিখ ঠিক করা হয়। এরপর বিয়ে সম্পন্ন করে মায়ের একটি আশা পূরণ করি।এখন কেবল নাতি-নাতনির অপেক্ষা।

 

মাস দুয়েক হলো, আমার কাজের সময় আগামি একবছরের জন্য চেইন্জ হয়েছে। আগে সকাল নয়টা থেকে সাতটা ছিল।এখন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা।বাসায় ফিরে আসতে সাঁড়ে নয়টা দশটা বেজে যায়। অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ি।মায়ের সাথে আগের চেয়ে কথাবার্তা কমই হয়। খাবারের টেবিলে মায়ের সাথে শুধু কথা হয়। তাই আজকাল মনের ভেতরটা কেমন অতৃপ্তিতে ভরে থাকে।

 

অথচ,বিয়ের পূর্বে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে সরাসরি মায়ের কাছে গিয়ে বসতাম।ছোটোবেলা থেকে বিয়ের আগেরদিন পর্যন্ত মায়ের উপরই নির্ভর ছিলাম। বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই দেখতাম মা কখনও নামাজের চৌকিতে বসা। কখনও বেডের ওপর। আমি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়তাম। মন ভরে থাকত তৃপ্তিতে।কলেজ, ভার্সিটি জীবনেও এ অভ্যাস ছিল। সন্ধ্যায় মায়ের কোলে মাথা রেখে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকা। মা’ও বসে থাকতেন আমার অপেক্ষায়। যতক্ষণ বাড়ি না আসি মা বসে থাকতেন। খাবার খাইয়েই ঘুমুতে যেতেন।

বিয়ের পর আর সেভাবে মায়ের কাছে যাওয়া হয় না। অফিস থেকে আসার পর কিছুক্ষণ মায়ের পাশে বসার চেষ্ঠা করি।কথা বলি। আগের মতো যেন সময় দিতে পারছি না।আমার কাছে মনে হয় ; মা কেমন যেন একা হয়ে যাচ্ছেন কিংবা একা করে দিচ্ছি। আমার মনে হতে লাগল, হয়ত ভাবছেন বিয়ের পর আমি বদলে গেছি।এরকম ভেবে মাঝেমধ্যে বুকের ভেতর মুচড় দিয়ে ওঠে।


অন্যদিকে সারাদিন আমি অফিসে থাকি।স্ত্রী ঘরের কাজকর্ম শেষ করে একটু সান্নিধ্য পাবার অপেক্ষায় থাকে।একান্তভাবে কিছু কথা বলতে চায়।আমি যদি মায়ের কাছে এভাবে দীর্ঘ সময় বসে থাকি, স্ত্রী হয়ত ভাববে তাকে সময় দিচ্ছি না।

এভাবে ভাবতে ভাবতে একসময় মনটা ভেতরে ভেতরে যুদ্ধ শুরু করে।একদিন আহত হয়।একসময় যন্ত্রণার মাত্রা বেড়ে যায়। আর হার্টবিট কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যায়।

এরপর আর কিছুই মনে নেই।যখন চোখের পাতা খুলি,দেখি— আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।আমার একপাশে মা আর অন্যপাশে স্ত্রী। দুজনে আমার দুটি হাত ধরে বসে আছে।দুজনেরই চোখ ছলছল করছে।

 

২৩/০৫/২০১৯

 

0 Comments: